একটা স্বপ্ন থেকেই গড়ে উঠে বাস্তব ভিত্তি। সময় ও সুযোগ এই দুটো একে অপরের পরিপূরক। যখন সময়/ইচ্ছা থাকে তখন সুযোগ হয় না আবার যখন সুযোগ/সক্ষমতা হয় তখন সময়/ইচ্ছা থাকে না। আমার এখন সময় আছে কিন্তু সুযোগ/সক্ষমতা নেই। একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছি; মোটামুটি আমার ফ্রেণ্ডলিস্টের সবাই জানেন বা আমাকে যারা চিনেন সবাই অবগত। পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠার আগে অনেক ভেবেছি- আনুমানিক চার বছর তো হবেই। আমাদের বাড়িতে একটি প্রাইভেট সংস্থার দেওয়া পরিত্যক্ত পাঠাগারের শ’খানেক বই ছিল। সেই থেকেই বইগুলো বাড়িতে গিয়ে নাড়াচাড়া করতাম আর ভাবতাম নিজে একটা পাঠাগার করলে ভালো হতো। তবে ছোট থেকেই বাড়িতে থাকতে পারিনা। বাহিরে থেকে পড়াশোনা সেই দশ/এগারো বয়স থেকে। পারিবারিক সমস্যা বা আর্থিক টানাপোড়েনে অনেক স্বপ্নই অপূরণীয় থেকে গিয়েছে। এখন এগুলো স্বাভাবিক। বড় হয়েছি আবার স্বপ্ন দানা বাধতে শুরু করেছে। এখনও বাড়ির বাইরে থাকি; বাকি জীবন তো আরও বাইরে থাকতে হবে। তাহলে কবে প্রতিষ্ঠা করব নিজের ইচ্ছাগুলোকে। আর পরে সেই ইচ্ছাগুলো এমন প্রানবন্ত থাকবে কি-না কে জানে!
দেরি করলাম না। বিদ্যাবাতি পাঠাগার দৃশ্যমান। চার-বছর ধরে টাকা জমাতে শুরু করলাম। জমতে জমতে পঞ্চাশ হাজার হয়েই গেলো। কিভাবে জমিয়েছি না বলি- ওটা ভালোবাসার গল্প তিক্ততায় ভরা।
সেই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে আমার বাড়িতেই একটি ঘর করেছি পাঠাগারটির জন্য। পঞ্চাশ হাজার টাকা আমার মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের জন্য বিশেষ কিছু। আমি এতোগুলো টাকায় ঘর করেছি পাঠাগারের জন্য- আমার গায়েই লাগেনি। বরং সত্যি বলতে ইদ ইদ লেগেছে। অন্তত ইচ্ছেটা তো দাঁড়ালো। বাবা-মা কষ্টেই চলেন, পারিবারিক টানাপোড়েন প্রচুর; এগুলো থাকবে না একদিন হয়তো। আমি আমার স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে বাবা-মায়ের কষ্টটাও দেখছিনা বলে কিছুটা অনুতপ্ত। ইচ্ছে করলে টাকাগুলো বাবাকে দিতে পারতাম। বাবাকে দিবও ইনশাআল্লাহ্। সেটি পেশাদার সফলতার উপর নির্ভর করছে। তবে এই পাঠাগারটি আমার বাবা-মায়েরই কষ্টের ঘামের ফসল। আমার বাবা-মা আমাকে পড়িয়েছে বই কিনে দিয়ে। আমি চাই বিনামূল্যে পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়ুক এলাকায় যারা বই কেনার অভাবে পড়তে পারে না। অন্য বাবা-মায়েদের যেন বই কিনে না পড়াতে হয়। আমার পঞ্চাশ হাজার টাকা এলাকায় আলো ছড়াবে বিশ্বাস করি বলেই এর প্রতিষ্ঠা। না, আমার পাঠাগারটির কোনো নিউজ আমি করাইনি। আমি চাই এর আলোই এর সুনাম ছড়িয়ে দিবে। আমার ইচ্ছাটা সফলভাবে পূর্ণতা পাবে।
অনেকেই বলেছে- এতো টাকা খরচ করে এইটা করার কি দরকার। আজাইরা খরচ। আমার বাবা-মায়েরও হয়তো একটু খারাপ লাগবে এসব কথা শুনে। তবে আমি তাদের বোঝাতে পারিনি, পারবও না যদি এর সুফল এলাকায় না দেখাতে পারি। এজন্য আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থন চাই।
সমাজকে একটা চাকরি পেয়ে দেখাতে হবে তবেই হয়তো আমার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এর জন্য বাড়িতে না থেকে শহরে পরে আছি চাকরি বা পড়াশোনার নেশায়। এদিকে আমার স্বপ্নের পাঠাগারটি পড়ে আছে অর্ধ গুছানো অবস্থায়। চাইলেও এটিকে সময় দিতে পারছি না। এর পেছনে অঢেল টাকা ঢালতে পাচ্ছি না ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। আমার যে সামর্থ্য নেই। যেভাবে চাইছি সেভাবে এর গতিবিধি বাড়াতে পাচ্ছি না। তবে আমার এলাকার গুণীজনেরা যেভাবে সমর্থন করেছেন -এটা চলার বড় শক্তি হতে পারে। আপনার ফেলে দেওয়া বা পরিত্যক্ত বইগুলোর জায়গা হোক আমাদের পাঠাগারে। আপনাদের সহযোগিতাই পারে সময়/ইচ্ছাকে সুযোগ/সক্ষমতার সাথে মিলাতে। বিদ্যাবাতি পাঠাগার’র মঙ্গল হোক।
Leave a Reply